সিয়াম মানে সংযম, বিরত থাকা, আত্মনিয়ন্ত্রণে মগ্ন থাকা। এ মাসে আমরা সংযত আচরণের সাধনা করি। আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার মহান মাস হচ্ছে রমজান মাস। সুবেহ- সাদিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত সর্বপ্রকার পানাহার, সহবাস, অসৎ কার্য বর্জন করে এক অমোঘ সাধনায় লিপ্ত থেকে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দেয় রমজান মাস। এ মহানমাসের পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের ঈমানী দায়িত্বকিন্তু আমরা সঠিকভাবে সে দায়িত্ব পালন করছি কি?ভোগ নয় ত্যাগেই সুখ অথচ রমজান এলেই আমাদেরভোগের বাড় বাড়ন্ত ঘটে। সে সুযোগটিই নেয় অসৎ
ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য মজুদ করে দেন দাম বাড়িয়ে। যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশের ব্যবসায়ীগণ রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেন সওয়াবের আশায় সেখানে পার্থিব লাভের আশায় দেশীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো দেন দাম বাড়িয়ে। হরিলুটের মতো অবস্থা। কে কার চেয়ে বেশি মুনাফা করবেন তার অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয় সেদিন সকালবেলা গেলাম বটতলা কাঁচাবাজারে কিছুসব্জি কিনবো বলে। বাজারটি সাধারণত সন্ধ্যায় বসে।গিয়ে দেখি দুটি মাত্র দোকান খোলা। টমেটো কত কেজি জিজ্ঞেস করতেই দোকানী বিরস মুখে উত্তর দিলো, চল্লিশ টাকা। মেজাজ খারাপ। গতকাল নিয়েছিবিশ টাকা কেজি আজ চল্লিশ হয় কেমন করে? মনেমনে রাগ করে বাসায় চলে আসি। সন্ধ্যায় সেই দোকানেআবার গেলাম। টমেটো কত টাকা কেজি জিজ্ঞেস করতেই দোকানী উত্তর দিলো, বিশ টাকা স্যার। আমিদোকানীকে ঠাণ্ডা মাথায় সকালের ঘটনাটি মনে করিয়েদিতেই কাচুমাচু করে বলতে লাগলো, স্যার কিছু মনে করবেন না। সকালবেলা সব দোকান বন্ধ থাকে তো তাই আমরা সুযোগটা নেই।এখন বোঝেন অবস্থা। আমাদের বাঙালির চরিত্রটাকেমন! কারোর অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে এরা কসুরকরে না বিন্দুমাত্র। রমজান মাস বলে কথা। কেউ কিআত্মশুদ্ধির প্রয়োজন অনুভব করছে অথচ বছর বছরকতশত ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে, হেদায়েত হচ্ছে। সপ্তাহে সপ্তাহে জুম্মার দিনে খুতবায় হুজুর বয়ান দিচ্ছেন। সৎকাজের ফযিলত বর্ণনা দিচ্ছেন কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে কি? কিচ্ছু না।বাজার ভিত্তিক মুনাফাখোররা ইসলাম ও সমাজেরজন্য যতটা বিপদজনক তার থেকেও বেশি বিপদজনকযারা যাকাত আদায় করেন না। যাদের উপর যাকাত ফরজ তারা সবাই যদি নিজ দায়িত্বে যাকাত আদায়করতেন তাহলে দেশে গরীব লোক থাকার কথা নয়।আমরা যতটা না যাকাত দেই তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকি ফটোসেশনে। যাকাত দেয়াকে নিজের ভালোত্বেরপ্রচার বলেই ধরে নেই আমরা। এমন জঘন্য মন মানসিকতাকে ঘৃণা জানাই।রমাজান এলেই দান খয়রাত বাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে থাকে মুসলমানগণ। সত্তুরগুণ সওয়াব পাওয়ার একটিসুযোগ আছে বলেই হয়তো আমরা একটু বেশি সচেতন হই। তবে দানের ক্ষেত্রে আমরা কি খেয়াল করি দানেরটাকাটি সৎ পাত্রে গেল কি না? ভিক্ষাবৃত্তিকে উৎসাহিতকরলাম কি না? সমাজের সচেতন নাগরিক হিসাবেআমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ভিক্ষুক না বাড়িয়ে কীভাবে আমরা লোকজনকে স্বাবলম্বী করতে পারি। ইসলামে ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।প্রকুত মানব কল্যাণ করতে হলে পাতিল ভরা খিচুড়িখাইয়ে হবে না। গরীব লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগতৈরি করে দিতে হবে।প্রতিবছর রমজান আসে রহমত, মাগফেরাত আরনাজাতের বারতা নিয়ে। আমরা যদি সচেতন হই এমাসের মহিমায় নিজকে মহিমান্বিত করবো নিশ্চয়ই।যারা অন্ধ যারা বধির যাদের অনুভূতির চকমকি পাথরনিস্প্রভ হয়ে গেছে তারা কখনো রমজানের মাহাত্ম্য বুঝতে পারবে না। ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর সকল লোভ লালসা যাদের কর্মপথে ধর্মপথে আশির্বাদ ছড়ায় তারাকখনো লজ্জার চাদর ছিঁড়ে দেখতে পাবে না সাম্যবাদের সোনালি সকাল।