দাকোপের নদী-খালে মাছ নেই, পেশা বদলাচ্ছেন জেলেরা
প্রতিনিধির নাম :
-
প্রকাশিত:
সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫
-
২২
বার পড়া হয়েছে

মোঃ শামীম হোসেন – স্টাফ রিপোর্টার
দখল ও দূষণের কারণে খুলনার দাকোপের নদী ও খালে নাব্যতা ও প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় দেশীয় মাছের উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। এতে মাছনির্ভর জেলে পরিবারগুলো তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। গত চার দশকে নদী ও খালের নাব্যতা হ্রাস ও দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মিঠা পানির দেশীয় মাছের উৎপাদন অনেকটাই কমে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, অবাধে কৃত্রিম বাঁধনির্মাণ, নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার ও মা-মাছ নিধনের কারণেই মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। নদী খনন এবং পানিদূষণ কমানো গেলে দেশীয় মাছের উৎপাদন আবারও বাড়ানো সম্ভব।জেলা মৎস্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মাছের উৎপাদন বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সরাসরি খাল ও নদীপথ পরিদর্শনে দেখা যায়, দাকোপে বহু জেলে পরিবার একসময় মাছ ধরেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু এখন নদীতে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় তাদের জীবনযাত্রায় এসেছে পরিবর্তন। কেউ রিকশা-ভ্যান চালাচ্ছেন, কেউ সবজি বিক্রি করছেন, কেউ এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দোকান চালাচ্ছেন। আলাউদ্দিন গাজী বলেন, ‘আগে বাজুয়ার চড়া নদীতে অনেক ধরনের মাছ পাওয়া যেত। এখন বর্ষায় ঋণ করে জাল কিনে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়ায় দেনা শোধ করতে পারছি না। আগে শুষ্ক মৌসুমে নদীর, ডোবায় জাল ফেললেই বোয়াল, আইড়, ট্যাংরা, পুটি, কৈ চিংড়ি, তেলাপিয়া,টাকি,শোল, বাইনসহ বিভিন্ন মাছ পাওয়া যেত। এখন শুধু গুড়া মাছ আর ময়লা-আবর্জনা আসে। মাছ নেই বললেই চলে। তিনি আরও বলেন, ‘নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায়, অবৈধ বাঁধ আর নিষিদ্ধ জালের ব্যবহারে মাছের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার যদি মা-মাছ নিধন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয় এবং নদী খনন করে তবে দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়বে।একই এলাকার আরেক জেলে নারায়ণ দাস বলেন, ‘হাওড়ে মাছ না থাকায় মহাজনের ধার শোধ করতে পারছি না। হতাশ হয়ে অনেকেই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। মাছের উৎপাদন বাড়াতে ডিমপাড়া মৌসুমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করতে হবে। কারেন্ট জাল, রিং জাল, চাই জালের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি নদীর স্বাভাবিক স্রোতধারা বজায় রাখতে হবে। জগো রায় জানান, দীর্ঘ ৪০ বছর মাছ ধরে জীবন কাটালেও গত দুই দশকে মাছের পরিমাণ কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘আগে নদীতে প্রচুর মাছ ছিল, এখন মাছ তো নেই, বরং ময়লা পড়ে নদীটাও সংকুচিত হয়ে গেছে। ধারদেনায় দিন কাটছে। নদীটা খনন করলে মাছের সম্ভাবনা থাকত।’ চড়া নদীর পাশের বাসিন্দা বৌদ্ধনাথ বলেন, ‘নদীতে ঘন ফাঁসের জাল পাতার কারণে পলি পড়তে পড়তে নদী শুকিয়ে গেছে। মাছ নেই, পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নদীটা যদি একটু খনন করা হয়, তাহলে আমরা কিছু মাছ পেতে পারি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘দেশীয় মাছের সংকটের মূল কারণ চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়া। কোথাও নদীতে বাঁধের খবর পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নদীর প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সম্প্রতি জলমহল বরাদ্দ কমিটির সভায় জানিয়ে দেয়া হয়েছে, জলমহালে অসঙ্গতি থাকলে বা স্রোতধারা বাধাগ্রস্ত হলে লিজ বাতিল করা হবে। নিষিদ্ধ জাল এবং বৈদ্যুতিক শক ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কোথাও চর দেখা দিলে আমাদের জানালে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সংবাদটি শেয়ার করুন
আরো সংবাদ পড়ুন